নেত্রকোনায় অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী লাঞ্ছনা: অভিযুক্তরা অগ্রিম জামিনে মুক্ত, নিরাপত্তাহীনতায় ভুক্তভোগী পরিবার
মোঃ সাইদুর ইসলাম
বারহাট্রা উপজেলা প্রতিনিধি
নেত্রকোনা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে প্রকাশ্যে উত্যক্ত ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় পেরিয়ে গেছে এক সপ্তাহেরও বেশি সময়। অথচ অভিযুক্ত চারজনের মধ্যে একজনও গ্রেপ্তার হয়নি। বরং তিন আসামি আদালত থেকে অগ্রিম জামিন নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, যা নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার এবং স্থানীয় সচেতন মহল।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর চাচা, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রকোণা জেলা যুগ্ম সদস্য সচিব শাহ আলম এক আবেগঘন বার্তায় বলেন, “আমি নিজেই সংগঠনের দায়িত্বে থেকেও আমার ভাতিজির সুবিচার নিশ্চিত করতে পারিনি। যারা ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রাম করি, আজ নিজেদের পরিবারের সদস্যই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে – এটা কষ্টের, লজ্জার।”
তিনি আরও বলেন, “চার আসামির মধ্যে তিনজন বুক ফুলিয়ে ঘুরছে। আমার ভাতিজি এখনো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। যদি আজ আমার জায়গায় আপনাদের কেউ থাকতেন, তাহলে কি চুপ করে থাকতেন? আমি একা লড়তে পারবো না, আমি জেলার প্রতিটি সচেতন নাগরিককে পাশে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।”
প্রসঙ্গত, ২১ এপ্রিল বিকেলে নেত্রকোনার ওই ছাত্রী শহরের একটি সড়কে এক আত্মীয়ের সঙ্গে চলাকালীন সময় প্রকাশ্যে উত্যক্তের শিকার হন। অভিযুক্ত মো. নাসিম ও তার সহযোগী মো. মাসুম, মো. ফয়সাল ও মো. সোনালী মিয়া প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হলে মেয়েটিকে মারধর করে, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। স্থানীয়রা দ্রুত এগিয়ে এসে উদ্ধার করে এবং ছাত্রীটিকে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার প্রতিবাদে ২৪ এপ্রিল বিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয়দের অংশগ্রহণে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। বক্তারা অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
নেত্রকোনা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ জানান, “অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হয়েছে এবং তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”তবে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্তরা জামিনে মুক্ত থেকে মুক্তভাবে চলাফেরা করায় সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, “এই ঘটনায় যদি দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় না আনা হয়, তাহলে সমাজে নারী ও কন্যাশিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে।”
ভুক্তভোগী পরিবারের আবেদন, দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হোক।