“সাম্প্রতিক পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নে করণীয়” শীর্ষক আলোচনা সভা: রাষ্ট্রবিরোধী অপচেষ্টা নাকি গোপন ষড়যন্ত্রের মোড়ক?
ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত উইমেন্স ভলান্টারী এসোসিয়েশন মিলনায়তনে সম্প্রতি আয়োজিত হয় একটি বিতর্কিত আলোচনা সভা যার শিরোনাম ছিল “সাম্প্রতিক পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নে করণীয়”। আয়োজক সংগঠন হিসেবে ছিল তথাকথিত বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, যাদের অতীত কর্মকাণ্ড ও বিবৃতি বহুবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এই আলোচনায় পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের দাবির আড়ালে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, সংবিধান ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলার ষড়যন্ত্রের আলামত স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। সভায় অংশগ্রহণকারীরা একদিকে যেমন জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর হস্তক্ষেপ কামনা করে বক্তব্য রাখে, তেমনি রাষ্ট্রের দমননীতির অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোর বিরুদ্ধে সরাসরি উস্কানিমূলক ভাষা ব্যবহার করে। “আদিবাসী” শব্দের ব্যবহার দ্বারা বক্তারা এ দেশের প্রচলিত সংবিধান, ইতিহাস ও বাস্তবতাকে অস্বীকার করে নিজেদের পরিচয় আলাদা করে তুলে ধরার চেষ্টা করে, যা একটি স্বাধীন ও অভিন্ন রাষ্ট্রের কাঠামোর ওপর সরাসরি চ্যালেঞ্জ হিসেবে পরিগণিত হয়। বাংলাদেশের সংবিধানে পরিস্কারভাবে বলা আছে যে, এদেশে কোনো আদিবাসী জনগোষ্ঠী নেই, বরং পার্বত্য চট্টগ্রামে ও অন্যান্য অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসমূহ এই রাষ্ট্রের নাগরিক। কিন্তু তথাকথিত বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম বারবার আন্তর্জাতিক সংলাপ ও তহবিল অর্জনের স্বার্থে সংবিধানবিরোধী এ শব্দটি ব্যবহার করে, যা তাদের দেশবিরোধী মানসিকতার প্রমাণ। এই আলোচনা সভার মাধ্যমে তারা আবারও প্রমাণ করলো যে, তারা মূলত সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের অপপ্রয়াস চালাচ্ছে, আর একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক মহলে মিথ্যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে চায়। বক্তারা বারবার ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তি চুক্তিকে যথাযথভাবে বাস্তবায়নের দাবি জানালেও, তারা চতুরভাবে চুক্তির সেইসব অংশ এড়িয়ে গেছেন যেগুলো জেএসএস বা ইউপিডিএফ-এর মতো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর অস্ত্র পরিহার, আত্মসমর্পণ ও সহিংসতা ত্যাগের কথা বলে। বাস্তবতা হলো, চুক্তি স্বাক্ষরের পরও তারা পাহাড়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। এদিকে এই সভায় বক্তারা নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিকে “দমনমূলক” আখ্যা দিয়ে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের দাবি জানায়, যা স্পষ্টতই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার ওপর হুমকি তৈরি করতে চায়। এতে একদিকে যেমন দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে, তেমনি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য নতুন করে মাঠ প্রস্তুত হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আলোচনা সভার পেছনে আন্তর্জাতিক কিছু এনজিও ও বিদেশি রাষ্ট্রের পরোক্ষ মদদ রয়েছে যারা বাংলাদেশকে অভ্যন্তরীণ সংকটে ঠেলে দিতে চায়। রাষ্ট্রের ভেতরে এই ধরণের সভা আয়োজন ও বক্তব্য উপস্থাপন রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল এবং এতে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। এই সভার মাধ্যমে আবারও স্পষ্ট হলো, তথাকথিত ‘আদিবাসী’ পরিচয়ের নামে কিছু গোষ্ঠী মূলত জাতিগত বিদ্বেষ উসকে দিয়ে দেশবিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে এবং তাদের এ ধরনের অপপ্রচার রোধে এখনই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। রাষ্ট্রের স্বার্থে, জাতীয় নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে এই সভায় অংশগ্রহণকারী এবং আয়োজক সংগঠনের বিরুদ্ধে এখনই উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করা যায় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির প্রকৃত ও ভারসাম্যপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।