কাব্যকথাঃ বাবা তুমি আকাশ আমার
কবি/লেখিকাঃ সানজিদা সুলতানা
বাবা—একটি শব্দ, অথচ তার মধ্যে লুকিয়ে আছে পাহাড় সম ভালোবাসা,যার ছায়া আমার জীবনের প্রতিটি ক্লান্ত দুপুরে ঠান্ডা বাতাস হয়ে বয়ে যায়। সে কখনো রোদ হয়ে জ্বলে, কখনো বৃষ্টি হয়ে ভিজিয়ে দেয় নিঃশব্দ কান্না।আমার ব্যর্থতায় সে হয় অদৃশ্য অশ্রু, আমার সাফল্যে তার চোখে হাসি—কিন্তু মুখে বলে কেবল, “ভালো করেছো মা।”
ছোটবেলায় আমি যখন পড়ে যেতাম,তিনি আমার কাঁধে হাত রেখে বলতেন,“পড়ে গেলে কি হয়েছে? আবার ওঠো।”আমি জানতাম না, তিনিও জীবনে অনেকবার পড়েছিলেন,কিন্তু কখনো বলেননি, শুধু আমাকে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন।
বাবা মানে খুব ভোরে ঘুম ভেঙে বাইরে যাওয়া,বিকেলে ক্লান্ত শরীরেও মুখে হাসি এনে বাড়ি ফেরা। আমার মুঠোফোনের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা নিঃশব্দ ব্যাকআপ—
যিনি কখনো আমার কোনো পোস্টে লাইক দেন না,কিন্তু নীরবে প্রতিটি শব্দ পড়ে যান।
আজ আমি যখন শব্দ গাঁথি, ছন্দে জীবন সাজাই,জানি—সেই প্রথম শব্দ শেখানোর মানুষটা তিনিই,যিনি বই কিনে দিয়ে বলতেন, “পড়ো, জ্ঞান হারায় না।”বাবা, তুমি কখনো কবিতা লেখো না,তবু তোমার জীবনের প্রতিটি কাজ একেকটা মহাকাব্য,আমি আজও তোমার মতো হতে পারিনি,তোমার মতো নিঃশব্দ অথচ অটুট ভালোবাসা কেউ দিতে পারবে না।
আমি পৃথিবীর বহু হাত ধরেছি-বন্ধু, সহপাঠী, সহযাত্রী,কিন্তু একজোড়া হাত কখনো ছেড়ে যায় না, একজোড়া হাত চুপচাপ আকাশের মতো পাশে থাকে—সে আমার বাবার হাত।এই হাতে আমি প্রথম হাঁটতে শিখেছি,প্রথম ভয় পেয়ে লুকিয়েছি বুকের খাঁচায়,এই হাত ধরেই আমি বুঝেছি—বিশ্বস্ততার সংজ্ঞা কী!
বাবা কখনো বলেন না “ভালোবাসি”,তবু সকালের নাস্তার ভাঁজে,পকেটে গুঁজে দেওয়া কিছু টাকা আর নীরবে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মুহূর্তগুলোতে সে ভালোবাসা শব্দ ছাপিয়ে যায়। বাবা মানে এক নীরব যোদ্ধা,যিনি নিজের স্বপ্নগুলোকে তুলে রেখেছেন আলমারির সবচেয়ে উপরের তাকে,আর নিচে রেখে গেছেন আমার জন্য নতুন জামা, নতুন বই,এক পৃথিবী আশীর্বাদ।
রাত্রির গভীরে যখন সবাই ঘুমায়,
বাবা তখন চিন্তা করেন—আমার আগামীকাল কেমন যাবে,আমি কি ঠিকমতো খেয়েছি? আমি হয়তো একদিন বড় হয়ে যাবো,নতুন শহরে, নতুন ঘরে যাবো,তবু এই হৃদয়ের এক কোণায় বাবার হাত যেন চিরদিন ধরা থাকে।