ভয়ংকর বাড়বকুণ্ড বিচে ডাকাতির মত ঘটনা
মোহাম্মদ আব্দুল মালেক
বিশেষ প্রতিনিধি চট্টগ্রাম
৬ মে ২০২৫, মঙ্গলবার। তখন রাত ১:২০ মিনিট একটা ইভেন্ট শেষে মোটামুটি ৪ দিন তারা ৪ জন বাড়বকুণ্ড সমুদ্র সৈকতে ক্যাম্পিং এ ছিলো। ৫ই মে শেষ, ৬ই মে'র ঠিক দেড়টার দিকে যখন তাদের রান্না প্রায় শেষ, তারা তখন ফটোশুট করতে থাকে, কারণ পরেরদিন সকলেই বের হয়ে যাবে তারা। রিফাত নামের একজন ছবি তুলে তরকারি দেখতে গিয়ে ছিলো।নাইম আর শুভ তখন একটু দুরে ছবি তোলাতে ব্যস্ত।
হঠাৎ কয়েকটা মানুষ দুর থেকে অন্ধকার থেকে ছুুটে এসেছে। বয়স সর্বোচ্চ তাদের ১৭/১৮। ৪ জন এসেছে তারা। সবার মুখে কাপড় দিয়ে ঢাকা, হাতে ছুরি,রান্দা, চাইনিজ কুড়াল। এসেই তাদের ঘিরে সবাইকে এক করে ফেললো। কোনো কথা বলার আগেই তারা তাদের ফোন নিয়ে নিলো। তারা কিছু বলতে নিলেই কোপ দিবে এমন একটা অবস্থা। ভাবভঙ্গি গুরুতর বুঝে তার ৪ জনই যা আছে সব দিয়ে দেয়। এর পর তাঁবু সব আউলায় তন্নতন্ন করে সব খুঁজে ডাকাতরা। যা ভাল্লাগে তাই নিয়ে নেয়। তারপর তাদের মানিব্যাগ থেকে সব টাকা নিয়ে, সবার ফোন ফেরত দিয়ে দেয়,শুধু নাইম এর ফোনটা নিয়ে যায়।
ঘড়ির কাঁটায় তখন ১: ৩৪ মতো। জাস্ট ১৪ মিনিটের একটা ভয়াবহ পরিস্থিতিতে তারা সবাই হতভম্ব।
প্রতিটা মানুষ বাকরূদ্ধ। ডাকাতরা থ্রেড দিয়ে গেলো ভোরের আলোর পরে তোদের যেনো না দেখি। এদিকে তাদের রাতের রান্না ওরা লাথি দিয়ে ফেলে দিয়েছে সারাদিন না খাওয়ায় তারা, রাতের না খেয়ে তারা বসে তখন, ৪টা মানুষ বাকরূদ্ধ হয়ে মাটিতে বসে আছে।
তারা কোনোমতে একটু শুইলো। ঘুম তো আসেনা তাদের, মোটামুটি সকাল হতেই চোখে আর ঘুম নেই তাদের। সকাল হলো, তাদের কারো পকেটে কানা পয়সাও নেই।
এলাকার একছেলে যে তাদের সাথে রাতে ছিলো, তাকে তারা বললাম কিছু খাবার বাকিতে নিয়ে আসতে। সে নিয়ে আসলো। খাবার তো আর গলা দিয়ে নামে না কারোই।
বেলা ১১ টা পার হয়েছে। যে ছেলে কয়েকদিন তাদেরকে এই খাবারে, ইত্যাদিতে সাহায্য করছিলো, ও বললো যারা এ কাজ করেছে সবাইকে চিনি। নাম্বারও আছে!
তারা তাকে বুঝিয়ে বললো যে তাদের কল করো।করে বলো ফোনটা দিয়ে দিতে,টাকা যা লাগে দিবে। ছেলেটা চলে গেলো, ঘন্টায় ঘন্টায় ওকে কল দিয়ে আপডেট চাই তারা।সে কেমন কথা ঘুরায়। দুপুর ৩ টার দিকে, তারা তখন বাড়বকুণ্ড ইউনি গ্যাসের সামনে দাঁড়ানো। মহিউদ্দিন নামে এক জেলে আছে, যার থেকে তারা বিগত কয়েকবছর ধরেই মাছ নিয়েছে। তাকে কল দিয়ে সব ঘটনা জানালো তারা। সে তাদের মেম্বারের বাড়ি নিয়ে গেলো। সে কি এক অবস্থা ভয়ংকর এক না খাওয়া ২ দিনের পর মেম্বারের দোকানে। বাহির হলো যে ডাকাতি করছে তাদের একজন মেম্বারের ভাতিজা।একজন ঐ যে ছেলে তারের খাবারে সাহায্য করতো 'রাকিব' তার চাচাতো ভাই। আর দুইজন ওদের বন্ধু।
মেম্বার প্রচন্ড রকম ভালো।মোটামুটি গন্যমান্য সকলকে কল দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে ছিলো। কোনোভাবেই কিছু হচ্ছে না এদিকে। মোটামুটি মাথা নষ্ট হয়ে আছে তাদের। যারা ডাকাতি করছে এরা পুরা এলাকার নাম্বার ওয়ান ডাকাত।সবাই তাদের বলতেছে শুকরিয়া আদায় করেন যে কাউকে কোনো কোপ দেয়নাই। মোটামুটি ২ ঘন্টার বিশাল ঝামেলা চলছে৷ ঐ ছেলের বাপ কল দিয়ে বলতেছে, ফোনটা দিয়ে যা! ঐ ছেলে বলে তুই কে? কেনো কল দিছোস? বাসায় আসলে সবার আগে তোকে কোপাবো! তারপর তারা বললো ফোন দিবে টাকা লাগবে! এটা নিয়ে আরো একঘন্টা ঝামেলার পর মোটামুটি একসময় ফোনটা হাতে পেলো।
পেয়ে ফোনের আসল যে জিনিস।সেসব আর কিছুই বাকি থাকলো না। তারা ফোন ফ্লাশ দিয়েও দিছিলো। কোনো ডকুমেন্টস থেকে কোনো কিচ্ছু নাই ফোনে। সাথে সিম ২টাও ভেঙ্গে ফেলছে ডাকাতরা। তাঁরা ৪ জন অনেক সতর্কে বাড়বকুণ্ড থেকে সীতাকুণ্ড বাজারে আসে।
ক্ষয়ক্ষতির হিসাবে,পাওয়ার ব্যান্কটা নিয়ে গেছে, সাথে ক্যাশ একটা ভালো বড় অংক চলে গেছে। আর সবচেয়ে বড় জিনিস, সবাই নিরাপদ ছিলো,কারো উপর কোনো এট্যাক হয়নি। তাঁরা বললো, আজকের এরপর থেকে বাড়বকুণ্ড সমুদ্র সৈকত পরিপূর্ণ ভাবে বয়কট করা হলো।এবং সবাই বয়কট করে ফেলেন। ভুলেও ঐসাইডে আর যায়েন না। পুরো এলাকার এসব বখাটে পোলাপান গরম হয়ে আছে।ওদের এলাকা থেকে ফোন উদ্ধার করে আনা চাট্টিখানি কথা নয়!
তারা আরও বললো: কেউ ভুলেও বাড়বকুণ্ড ঘুরতে আর যাবেন, কথার আগে কোপ দিয়ে বসবে।
নাঈম। ৬ই মে ২০২৫, সীতাকুণ্ড বাজার।